অমর একুশে আজ
প্রকাশিত : ০০:৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়/ ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে’। পাকিস্তানের জান্তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা। লুণ্ঠন করতে চেয়েছিল বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-গর্বের শ্রেষ্ঠ স্থানটি। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তা হতে দেয়নি। বুকের রক্ত দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে মাতৃভাষার সম্মান। ১৯৫২ সালের এই দিনে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার অধিকার। আজ রক্তাক্ত সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে গভীর শোক ও বেদনার দিন; একই সঙ্গে গৌরবেরও। আজ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো। একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীর সারি দেখা যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
১২টা ১ মিনিটে শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় একুশের প্রথম প্রহর। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা জানানোর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বাররা। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বাংলা বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চিরপ্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের উৎসর্গ করে এ বছর অমর একুশে বইমেলার এ থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানে ছাত্রদের আত্মত্যাগের চেতনা বইমেলার সর্বত্র প্রতিফলিত হবে।
এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। হাতে ফুল, হৃদয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ অমর একুশের এ গান তুলে মানুষের সম্মিলিত স্রোত মেশে এক পথে। শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য শেষে অনেকেই যান আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে। আজ সরকারি ছুটির দিন। দেশের সর্বত্র অর্ধনমিত রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা। টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে। জাতীয় দৈনিকগুলোয় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ ও স্থান বর্ণমালাসংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮ দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮ দেশে একযোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারা দেশেই আজ থাকছে নানা আনুষ্ঠানিকতা।
এমবি//
আরও পড়ুন